নিউজ ডেস্ক :: চকরিয় থেকে টেকনাফ পর্যন্ত কক্সবাজারের প্রত্যেক উপজেলায় ইয়াবা কারবারিদের নতুন নতুন গডফাদারের উত্থান হয়েছে, যারা ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে এসব বড় কারবারির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
এছাড়া জেলায় নতুন নতুন মাদক কারবারির উত্থান ঘটছে। সম্প্রতি তাদের একটি তালিকা করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তালিকাটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানোর পর পর্যালোচনা চলছে। ২৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পরপরই ছোট-বড় এসব ইয়াবা কারবারিকে ধরতে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে মাদকের পৃষ্ঠপোষক ও অন্য কারবারিরা আত্মসমর্পণের পর নতুন নতুন ইয়াবা কারবারির উত্থান হয়েছে কক্সবাজারে। সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই তাদের ইয়াবার চালান আসছে, যাদের কেউ কেউ আগে পকেটমার বা রিকশাচালক ছিলেন। ইয়াবার কারবার করে তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। আর তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন নতুন কিছু গডফাদার।
ইতিমধ্যে এসব ইয়াবা কারবারির একটি তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তালিকায় নতুন পাঁচ শতাধিক কারবারির নাম আছে, যাদের অর্ধশত ইয়াবার গডফাদার। তারা একসময় খুবই গরিব ছিলেন। ইয়াবার কারবার করে এখন তারা হাজার কোটি টাকার মালিক।
তালিকাটি পুলিশ সদর দপ্তর পর্যালোচনা করছে। নতুন গডফাদারদের মধ্যে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের তানজিমারখোলার জয়নাল আবেদীন, সুলতান আহমেদ, ফজল কাদের, রমজানুর রহমান অন্যতম। কক্সবাজার জেলা পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নতুন ইয়াবা কারবারিদের ধরার কাজ চলছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে।
ওই কারবারিদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতাদের কানেকশন আছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছেন বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, মাদক কারবারিরা মিয়ানমার থেকে নির্দিষ্ট পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে। ওইসব পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। তারপরও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদের খুরের মুখ, ঘোলারপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝেরপাড়া সৈকত, সাবরাং কচুবনিয়া, হারিয়াখালী, কাটাবনিয়া, আলীরডেইল, মুন্ডারডেইল, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেষখালীয়াপাড়া সৈকত, নোয়াখালীপাড়া, কুনকারপাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর, শীলখালী, মাথাভাঙ্গা, বড়ডেইল, উখিয়ার ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগর এলাকায় কারবারিরা সক্রিয় রয়েছে। তাছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া, জেটিঘাট, জালিয়াপাড়া, নোয়াপাড়া, সাবরাং, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, কায়ুকখালী পাড়াঘাট, নাইট্যংপাড়া ঘাট, বরইতলী, কেরুনতলী, হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা, জাদিমুড়া, আলী খালী, দমদমিয়া, চৌধুরীপাড়া, হ্নীলা, মৌলভীবাজার, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী, কাঞ্জরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, উখিয়ার থাইংখালী, পালংখালী, বালুখালী, ঘুমধুম, রেজুপাড়া, তমব্রম্ন, আছাড়তলী ও ঢালারমুখসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, দেশ থেকে মাদক নির্মূল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজার থেকে মাদক নির্মূল করতে জেলা পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। নতুন ইয়াবা কারবারিদের ধরতে শিগগির জোরালো অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে। কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা টেকনাফসহ আশপাশের এলাকার মানুষের একসময় দৈন্যদশা ছিল। মাছ ও লবণ চাষই ছিল সবার কাজ। কেউ কেউ বাস বা ট্রাকের হেলপার অথবা চালক ছিলেন। বছর দশেক আগে হঠাৎ করেই তাদের অনেকে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েন। রাতারাতি বড়লোক হওয়ায় আশায় গড়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লোকই যোগ দেন ইয়াবা কারবারে এবং রাতারাতি কোটিপতি বনেও যান অনেকে। ইয়াবার টাকায় বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দন সব ভবন।-দেশ রূপান্তর।
পাঠকের মতামত: